এখানে আমরা একটা পরিবারবৃক্ষ বা ফ্যামিলি ট্রির ছবি দেখতে পাচ্ছি। ছবিটা ভালো করে দেখো।
এবার তোমরাও নিজেদের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিজের 'ফ্যামিলি ট্রি' তৈরি করো।
ছক ১.১: আমার পরিবারবৃক্ষ
|
ছক ১.২: আমার পূর্বপুরুষ
প্রপিতামহ | প্রপিতামহী |
|
|
পিতামহ | পিতামহী |
|
|
|
আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে আজকের মানুষের যেমন ক্রমবিকাশ হয়েছে, হিন্দুধর্মেরও তেমন করে ক্রমবিকাশ ঘটেছে। চলো, আমরা হিন্দুধর্মের উদ্ভব এবং ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জেনে নিই।
পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মেরই কোনো না কোনো প্রবর্তক আছেন। কিন্তু হিন্দুধর্মের আসলে কোনো প্রবর্তক নেই। এ ধর্ম কেউ প্রবর্তন করেননি। এ ধর্মবিশ্বাসটি এত প্রাচীন যে তখন অন্য কোনো ধর্মবিশ্বাসই এ অঞ্চলে ছিল না। অনেকেই আবার একে 'সনাতন' ধর্ম বলে। কারণ, এ ধর্ম হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় পালন করে আসছে। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচ থেকে সাত হাজার বছর আগে সনাতনধর্ম বা হিন্দুধর্মের সূচনা। অর্থাৎ এটি সাত থেকে নয় হাজার বছরের পুরোনো ধর্মমত। এর সমসাময়িক প্রায় সকল ধর্মমত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে সেসব ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা খুবই কম। অথচ পৃথিবীতে এখনো প্রায় ১২০ কোটি মানুষ হিন্দুধর্মাবলম্বী।
সিন্ধু, বিতস্তা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, শতদু, বিপাশা ও সরস্বতী- এই সাত নদীবিধৌত অঞ্চলকে প্রাচীনকালে সপ্তসিন্ধু বলা হতো। বর্তমানের কাশ্মীর, পাঞ্জাব, সিন্ধু ও আফগানিস্তানের কিছু এলাকা এর মধ্যে পড়ে। এখানেই বেদকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মমত বিকশিত হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে পারস্যের (বর্তমান ইরান) রাজা সাইরাস এ অঞ্চলে আক্রমণ চালান। পারসিকরা সপ্তসিন্ধু উচ্চারণ করতে পারত না। তারা বলত 'হপ্তহিন্দু'। সেই থেকে ভারতীয় অঞ্চলের মানুষদের বহির্বিশ্বের মানুষ 'হিন্দু' বলে অভিহিত করত। আর তাদের ধর্মবিশ্বাসকে বলা হতো 'হিন্দুধর্ম'। এখন এটাই সর্বাধিক পরিচিত নাম।
হিন্দুধর্ম কেবল একটি ধর্মই নয়, এ অঞ্চলের সুমহান সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। বিভিন্ন ধর্মাচারের মধ্য দিয়ে এই ধর্মটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। খাদ্যাভ্যাসে এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছে।
এই সপ্তসিন্ধুর অববাহিকা থেকে বিকশিত হওয়া হিন্দু ধর্মমত একসময়ে সুমাত্রা, জাভা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাচীন হিন্দু-মন্দির 'আঙ্কোরওয়াট' কম্বোডিয়ায় টিকে আছে। এছাড়া মালয়েশি- য়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে হিন্দুসভ্যতার প্রচুর কীর্তি রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রতীক বিষ্ণুর বাহন গরুড়। এখনো ইন্দোচীন, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় বিপুলসংখ্যক হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ আছেন।
'ধৃ' ধাতু থেকে 'ধর্ম' শব্দটি এসেছে। ধূ মানে ধারণ করা। কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয় যা ধারণ করে তাই তার ধর্ম। মানুষ যা ধারণ করে, মনুষ্যত্ব থেকে তাকে ভ্রষ্ট হতে দেয় না- তাই তার ধর্ম। মহর্ষি পতঞ্জলি 'যোগদর্শনে' বলেছেন, 'যে শক্তি পদার্থের গুণাবলি ধরে রাখে, সে শক্তিকে ধর্ম বলা যেতে পারে। মানুষের অন্তর্নিহিত যে শক্তি তাকে 'দেবত্বে' উত্তীর্ণ করে তাই তার ধর্ম। অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস থেকে হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসের দর্শনগত পার্থক্য রয়েছে। সে পার্থক্য অনুধাবন না করতে পারলে হিন্দুধর্মকে উপলব্ধি করা যায় না।
হিন্দুধর্ম গ্রহণের জন্য কোনো শপথবাক্য পাঠ করার প্রয়োজন হয় না। এ ধর্ম মুক্তচিন্তার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় হিন্দুধর্ম। এই ধর্ম নিজের মতকে শ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র বলে দাবি করে না। এই ধর্মে বিভিন্ন ধরনের মতবাদের সহাবস্থান দেখা যায়। তাই সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে প্রায় বিনা বাধায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মমত বিকশিত হতে পেরেছে। অন্যের বৈচিত্র্যকে সম্মান করা হিন্দুধর্মের শিক্ষা। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপনই হিন্দুধর্মের মূল লক্ষ্য। ধর্মের এই উদারনৈতিক ধারার জন্য ধর্মটি এত বছর ধরে স্বমহিমায় টিকে আছে। যুগে যুগে এর সংস্কার হয়েছে। 'যুগধর্ম' হিসেবে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা একে সহজভাবে মেনেও নিয়েছেন।
ছক ১.৪: হিন্দুধর্মের কথা
|
প্রতিটি ধর্মের দুটি অংশ থাকে। ধর্মতত্ত্ব ও সাধনা। হিন্দুধর্মতত্ত্বের চারটি ধাপ রয়েছে। মনু বলেছেন-
বেদঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ স্বস্য চ প্রিয়মাত্মনঃ।
এতচ্চতুর্বিধং প্রাহুঃ সাক্ষাদ্ ধর্মস্য লক্ষণম্।।
(মনুসংহিতা, ২/১২)
অর্থাৎ বেদ, স্মৃতিশাস্ত্র, সদাচার ও বিবেকের বাণী- এ চারটি হচ্ছে ধর্মের সাক্ষাৎ বা সাধারণ লক্ষণ। এই চারটিকে ক্রমান্বয়ে অনুসরণ করলেই হিন্দুধর্মের স্বরূপ বোঝা যায়।
হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ। এটিকে মানবসভ্যতার অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বেদকে কেন্দ্র করে হিন্দুধর্ম বিকশিত হয়েছিল। শিষ্য গুরুর কাছ থেকে শুনে আত্মস্থ করতেন বলে বেদকে শ্রুতিও বলা হয়। বেদের জ্ঞান ও দর্শন ঋষিদের মাধ্যমে জগতে এসেছে। ঋষিরা নিজেদেরকে বেদের রচিয়তা মনে করেননি । তাই বেদকে অপৌরুষেয় বলা হয়।
মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব সমগ্র বেদকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন- ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব। প্রতিটি বেদের আবার চারটি ভাগ রয়েছে। সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। সংহিতায় মন্ত্র বা স্তব আছে। সংহিতা অংশের ব্যাখ্যা আছে ব্রাহ্মণে। আরণ্যক অংশে ব্রাহ্মণ অংশের নিগূঢ় তত্ত্বগুলো নিয়ে আলোচনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাস্ত্রবিদ যে তাত্ত্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন তার সংকলন উপনিষদ। বেদের ছয়টি অঙ্গ রয়েছে
- শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ব্যাকরণ, ছন্দ ও জ্যোতিষ। এগুলো বেদ পাঠের সহায়ক গ্রন্থ।
শ্রুতির পর স্মৃতির স্থান। অন্যতম বেদাঙ্গ হলো কল্প বা কল্পসূত্র। এই কল্পসূত্রের মধ্যে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের নিয়মকানুন রয়েছে। পরবর্তীকালে সেগুলোকে অনুসরণ করে নানা গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এসব গ্রন্থগুলোকে একসঙ্গে স্মৃতিশাস্ত্র বলা হয়। যেমন: মনুসংহিতা, যাজ্ঞবন্ধ্যসংহিতা, পরাশরসংহিতা ইত্যাদি।
এছাড়া বাল্মীকি ও ব্যাসদেব রচিত যথাক্রমে রামায়ণ ও মহাভারত নামের মহাকাব্য দুটিকে হিন্দুধর্মে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। এ দুটি গ্রন্থে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন তত্ত্ব ও রীতিনীতির আলোচনা এবং প্রয়োগ বা ব্যবহার পাওয়া যায়। তাই গ্রন্থ দুটিকে মহাকাব্যের পাশাপাশি ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা দেওয়া হয়। এছাড়া ১৮টি পুরাণ ও ১৮টি উপপুরাণ রয়েছে।
বেদ-এর চারটি ভাগের বিষয়বস্তু সম্পর্কে দলে/জোড়ায় তথ্য সংগ্রহ করে এককভাবে নিচের তথ্যছকটি পূরণ করো।
ছক ১.৫: বেদ-এর কথা
বেদ-এর ভাগসমূহ | বিষয়বস্তু |
|
|
|
|
|
|
|
|
হিন্দুধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ হলো ঋগ্বেদ। ঋগ্বেদে দেবতাদের মোট সংখ্যা ৩৩ বলা হয়েছে।
যে দেবাসো দিব্যেকাদশস্থ পৃথিব্যা মধ্যেকাদশ স্থ।
যে অঙ্গুক্ষিতা মহিনৈকাদশ স্থ তে দেবাসো যজ্ঞমিমং যুষধ্বস্।।
অর্থ: দ্যুলোকের অর্থাৎ সুদূর আকাশের দেবতা ১১ জন, পৃথিবীর দেবতা ১১ জন এবং অন্তরীক্ষের দেবতা ১১ জন। এরা স্বমহিমায় যজ্ঞ গ্রহণ করেন।
কিন্তু এই বিভিন্ন দেব-দেবী মূলত একই শক্তি বা ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রকাশ। সেটা প্রাচীন ঋষিরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাই ঋগ্বেদে বলা হয়েছে: 'মুধা ভুবো ভবতি নক্তমগ্নিস্ততঃ সূর্যো জায়তে প্রাতরুদান' (১০/৮৮/৬)।
অর্থ: অগ্নি রাতে পৃথিবীর মস্তক, প্রাতে তিনি সূর্য হয়ে উদিত হন।
ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডলে বলা হয়েছে: 'একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি।' অর্থাৎ একইজন বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছেন।
বৈদিক যুগে অগ্নিকে দেবতাদের দূতরূপে গ্রহণ করে যজ্ঞের আয়োজন করা হতো। এতে বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশে হবিদ্রব্য (ঘি, পিঠা, পায়েস প্রভৃতি) অর্পণ করা হতো-বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকল কর্মকান্ড যজ্ঞরূপে উপস্থাপন করতেন ঋষিগণ। এজন্যই হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, 'জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ-ধন্য হলো ধন্য হলো মানবজীবন'। তখন দেবতাদের তুষ্টির পাশাপাশি ঋষিগণ আত্মজ্ঞান লাভের সাধনা করতেন। বহু দেবতার পরিবর্তে সর্বত্র এক ঈশ্বরের উপস্থিতি তাঁরা উপলব্ধি করলেন। নিরাকার সর্বময় ব্রহ্মের ধারণা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ ও কর্ম অনুসারে এক এক দেবতার উপাসনা করেছেন। বেদে উল্লিখিত দেবতাদের বৈদিক দেবতা বলা হয়।
বেদে পৃথিবীর দেবতা হিসেবে অগ্নিকে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পৃথিবীতে সবসময় থাকেন। বৈদিক দেবীদের মধ্যে অন্যতম হলেন উষা। রাতের অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে নতুন সূর্য উদয়ের মাধ্যমে দিনের সূচনা করেন দেবী উষা। বেদে স্বর্গের দেবতা হিসেবে ইন্দ্রকে উল্লেখ করা হয়েছে। ঈশ্বরের বর্ষণশক্তির প্রকাশ হলো ইন্দ্র।
বর্তমানে যেসব দেবদেবীর পূজা করা হয়, তাঁদের অনেকের নাম বেদে পাওয়া যায় না। তাঁদের নাম জানা যায় পুরাণে। পুরাণে বর্ণিত দেবদেবীকে পৌরাণিক দেবদেবী বলা হয়। পৌরাণিক যুগে দেবদেবীর বিগ্রহ বা প্রতিমা নির্মাণ করে পূজার প্রচলন হয়। বর্তমানে অনেক দেব-দেবীর রূপে অনেক বিবর্তন হয়েছে। আবার অনেক নতুন দেবদেবীর পূজাও প্রচলিত হয়েছে। প্রধান তিনজন পৌরাণিক দেবতা হলেন-ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব বা মহেশ্বর।
মন্ত্রে যেভাবে দেবদেবীর রূপ কল্পনা করা হয়েছিল, বিগ্রহও ঠিক সেই রূপে নির্মিত হয়ে আসছে। পৌরাণিক যুগে মন্দির নির্মাণ করে তাতে দেবদেবীর প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠিত দেবদেবীকে পত্র-পুষ্পের অঞ্জলি ও ভোগারতি দিয়ে শঙ্খ, ঘণ্টা ও অন্যান্য বাদ্য বাজিয়ে পূজা করা হয়। বিষ্ণু, শিব, লক্ষ্মী, কালী প্রভৃতি দেবতার নিত্যপূজা করা হয়। বিশেষ বিশেষ তিথিতে পূজা হয় ব্রহ্মা, দুর্গা, সরস্বতী প্রভৃতি দেবদেবীর। অবশ্য প্রতিদিন যে সকল দেবদেবীর পূজা হয়, বিশেষ তিথিতেও তাঁদের অনেকের পূজা করা হয়। যেমন- বিষ্ণু, গণেশ, শিব। আবার বেদ এবং পুরাণে না থাকলেও আরও কিছু দেবদেবীর পূজা করা হয়ে থাকে, যাদেরকে আমরা লৌকিক দেবদেবী বলে থাকি। মূলত বিশ্বাস থেকে যে সকল দেবদেবীর পূজা করা হয়, তাঁদের লৌকিক দেবদেবী। মনসা, শীতলা, বনবিবি, দক্ষিণ রায় প্রভৃতি স্থানীয় লৌকিক দেবতার পূজা বিশেষ তিথিতে করা হয়।
তোমার এলাকার অথবা তোমার জানা লৌকিক দেবদেবী সম্পর্কে নিচের তথ্যছকটি পূরণ করো। ছকের শিরোনামে তোমার নির্বাচিত লৌকিক দেবদেবীর নাম লেখো।
হিন্দুধর্মে প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিরাকার ব্রহ্মকে আমরা 'ওঁ' এই শব্দ প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করি। নির্গুণ ব্রহ্মের প্রতীক হিসেবে শিবলিঙ্গ ব্যবহার করা হয়। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক: এ কারণে শিবলিঙ্গ সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক। শিব শব্দের অপর একটি অর্থ হলো যাঁর মধ্যে প্রলয়ের পর বিশ্ব নিদ্রিত থাকে। বলা হয়েছে 'লয়ং যাতি ইতি লিঙ্গম্'। অর্থাৎ সমস্ত কিছু যেখানে লয়প্রাপ্ত হয় তাই লিঙ্গ। লিঙ্গ-এর উপরে ত্রিপুণ্ড্র বা তিনটি সাদা দাগ থাকে। এ ত্রিপুণ্ড্র শিবের কপালে থাকে।
হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রাচীন প্রতীক স্বস্তিকা চিহ্ন। সংস্কৃতে স্বস্তিকা শব্দের অর্থ কল্যাণ বা মঙ্গল। মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আমাদের প্রধান তিন দেবতা- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের মিলিত প্রতীক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের প্রতীক।
নিরাকার ব্রহ্মের বিভিন্ন শক্তি হিসেবে আমরা দেবতাদের উপাসনা করি। যাঁদেরকে বিভিন্ন প্রতীকে উপস্থাপন করা হয়। পুরাণের বর্ণনা অনুসারে দেবতাদের যে মূর্ত রূপ দেওয়া হয় তাকে মূর্তি বা প্রতিমা বলা হয়। এই মূর্তিতে হিন্দুদর্শন ও শিল্পবোধের অপূর্ব প্রতিফলন ঘটেছে।
শুক্রাচার্য রচিত 'শুক্রান্তি' শাস্ত্রে তিন শ্রেণির মূর্তির কথা বলা হয়েছে।
সাত্ত্বিক: এ ধরনের মূর্তিতে দেবদেবী ভক্তকে কাঙ্ক্ষিত বস্তু প্রদানের মুদ্রায় হাত বিন্যস্ত রেখে যোগাসনে বসে থাকেন।
রাজসিক: এতে দেবদেবী ভক্তকে কাঙ্ক্ষিত বস্তু প্রদানের মুদ্রাসহ যুদ্ধাস্ত্র ও অলংকারসজ্জিত দেহে নিজ বাহনের উপরে উপবিষ্ট থাকেন।
তামসিক: এতে দেবদেবী অস্ত্রসজ্জিত ভয়ানক চেহারায় আবির্ভূত হন।
পুরাণে দেবদেবী সম্পর্কে যে বিবরণ আছে, সে অনুসারে মূর্তি গড়তে হয়। প্রত্যেক দেবদেবীর নিজস্ব মূর্তরূপ রয়েছে। সে মূর্তরূপে দেবদেবীর গড়ন-বিন্যাস, শারীরিক অবস্থান, গহনা, বাহন, আয়ুধ, পোশাক, কারুকাজ, সহচর, অনুচর প্রভৃতির বর্ণনা থাকে। আবার দেবতার ওপর দেবত্ব প্রকাশের জন্য মূর্তিতে জ্যোতির্বলয় ব্যবহার করা হয়।
প্রত্যেক দেবদেবীর কোনো না কোনো বাহন থাকে। এই বাহনগুলো দেবদেবীর শক্তিমত্তা ও দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। যেমন সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস। কারণ, রাজহাঁস অসারকে বাদ দিয়ে কেবল সার অংশটুকু বেছে নিতে পারে। জল মেশানো দুধ থেকে রাজহাঁস শুধু দুধটুকু হেঁকে পান করতে পারে। গণপতি গণেশের বাহন ইঁদুর। বিশালকায় দেবতা গণেশকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বস্তু দেখার সুযোগ করে দেয় ক্ষুদ্র বাহনটি। এভাবে বিষ্ণুর বাহন গরুড়, শিবের বাহন বৃষভ, দুর্গার বাহন সিংহ। এসব বাহন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ সম্মানের। এভাবে দেবদেবীর পূজার মাধ্যমে হিন্দুরা প্রাণিকুলের প্রতি সম্মান জানায়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।
দেবদেবীদের হাতে থাকা বিভিন্ন বস্তুকে আয়ুধ বলে। এসব আয়ুধ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনির প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণত দেবদেবীর আয়ুধ হিসেবে দেখা যায় পুস্তক, কমণ্ডলু, চক্র, শঙ্খ, গদা, পদ্ম, ঢাল, খড়া, লাঙ্গল, তীর, ধনুক, কুঠার, ত্রিশূল ইত্যাদি।
হিন্দু দেবদেবীদের অধিক অঙ্গও কোনো না কোনো তাৎপর্য বহন করে। যেমন- নারী শক্তি যে অজেয় তার প্রতীক দুর্গা। মায়েরা যেভাবে ২ হাতে ১০ হাতের কাজ করে সংসার সামলান, তার প্রতীক স্বরূপ দেবী দুর্গার ১০ হাত। আধুনিক চিত্রকলাতেও এভাবে প্রতীকের ব্যবহার দেখা যায়।
ছক ১.৭: দেবদেবীর মূর্তরূপ
দেবদেবীর নাম | ঈশ্বরের যে শক্তির প্রকাশ | বাহন | দৈহিক বৈশিষ্ট্য | আয়ুধ | সাত্ত্বিক/ তামসিক/ রাজসিক |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
মনুসংহিতায় ধর্মের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে ১০টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে:
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং
শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥
(মনুসংহিতা, ৬/৯২)
অর্থাৎ সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য, ক্ষমা, আত্মসংযম, চুরি বা অপহরণ না করা, শুচিতা বা পবিত্রতা, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, প্রজ্ঞা, বিদ্যা, সত্য ও অক্রোধ- এই ১০ টি ধর্মের বিশেষ লক্ষণ।
ছক ১.৮: আমার ধর্ম
ধর্মের লক্ষণ | মানি না | মানার চেষ্টা করি | মেনে চলি | আমার কিছু বলার আছে |
সহিষ্ণুতা |
|
|
|
|
ক্ষমা |
|
|
|
|
আত্মসংযম |
|
|
|
|
চুরি না করা |
|
|
|
|
শুচিতা |
|
|
|
|
ইন্দ্রিয়নিগ্রহ |
|
|
|
|
প্রজ্ঞা |
|
|
|
|
বিদ্যা |
|
|
|
|
সত্য |
|
|
|
|
অক্রোধ |
|
|
|
|
তোমরা তো রামায়ণের অনেক গল্প শুনেছ এবং পড়েছ। এই গল্পগুলো যেমন আকর্ষণীয় তেমনি রামায়ণে আছে অসাধারণ কিছু চরিত্র।
রামায়ণের চরিত্রগুলোর মধ্য থেকে তোমার ভালো লেগেছে, এ রকম কয়েকটি চরিত্রের নাম তালিকায় লেখো।
ছক ১.৯: রামায়ণের প্রিয় চরিত্র
|
দলে/জোড়ায় আলোচনা করে প্রত্যেকের তালিকা থেকে একটি করে চরিত্র বেছে নাও। সবগুলো চরিত্র নিয়ে একটি নাটিকা তৈরি করে উপস্থাপন করো।
যে নাটিকাগুলো দেখেছ, তার মধ্য থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চরিত্রটি বেছে নাও। এই চরিত্রটিকে কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে তোমার উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয় তা ছকে লেখো।
ছক ১.১০: রামায়ণের প্রিয় চরিত্র
চরিত্রের নাম ও পরিচয় | উল্লেখেযোগ্য বৈশিষ্ট্য |
|
|
হিন্দুধর্মে রামায়ণ একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মগ্রন্থ। আদিকবি বাল্মীকি এর রচয়িতা। রামচন্দ্রের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমগ্র জীবন-কাহিনি এখানে রয়েছে। রামচন্দ্রের ধর্মনিষ্ঠা, সততা, বীরত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, ত্যাগ, সংযম, গুরুভক্তি, প্রজাপ্রীতি প্রভৃতি গুণাবলি এই কাহিনিতে ফুটে উঠেছে। মূল কাহিনির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা উপকাহিনি।
রামায়ণ সাতটি কান্ডে বিভক্ত- আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, যুদ্ধকান্ড ও উত্তরকান্ড। সবগুলো কান্ড মিলে পাঁচশ সর্গ বা পরিচ্ছেদ রয়েছে। এই সর্গগুলোতে চব্বিশ হাজারের বেশি শ্লোক রয়েছে।
রামায়ণের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো
ত্রেতাযুগে কোশলদেশে অযোধ্যা নামে এক নগরী ছিল। স্বর্গের রাজধানী অমরাবতীর সাথে তুলনীয় এই নগরী। যুদ্ধ করে এ নগরীকে কেউ জয় করতে পারত না। তাই এর নাম অযোধ্যা। অযোধ্যার রাজা ছিলেন দশরথ। তাঁর তিন রানি- কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। সন্তান কামনা করে রাজা দশরথ 'পুত্রেষ্টি' যজ্ঞ করেন। এরপর কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্নর জন্ম হয়। উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষায় তারা বড় হয়ে ওঠে।
ছক ১.১১: অযোধ্যা নগরীর একটি কাল্পনিক চিত্র
|
এদিকে বিশ্বামিত্র মুনির সিদ্ধাশ্রমে রাক্ষসেরা বড়ই উপদ্রব শুরু করে। এ থেকে বাঁচার জন্য তিনি রাম ও লক্ষ্মণ- কে সিদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসেন। রামের হাতে তাড়কারাক্ষসী, তাড়াকাপুত্র মারিচ ও সুবাহু নিহত হয়।
এরপর সকলে মিথিলায় আসেন। মিথিলার রাজা জনকের সীতা নামে একটি মেয়ে ছিল। জনকের ইচ্ছা, তাঁর প্রাসাদে থাকা হরধনুতে যিনি গুণ (রজু) লাগাতে পারবেন, তাঁর সাথেই তিনি সীতার বিয়ে দেবেন। বিশ্বামিত্রের নির্দেশে রাম ধনুক হাতে তুলে নেন। তিনি ধনুকে এত জোরে টান মারেন যে ধনুক ভেঙে দুটুকরো হয়ে যায়। এরপর রামের সঙ্গে সীতার বিয়ে হয়। রাজা জনকের আরও এক মেয়ে ছিলো। তাদের মধ্যে লক্ষ্মণের সঙ্গে বিয়ে হয় উর্মিলার। জনকের ভাই ছিলেন কুশধ্বজ। তাঁর ছিল দুই মেয়ে মাণ্ডবী আর শ্রুতকীর্তি। শত্রুমের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রুতকীর্তির। ভরতের সাথে বিয়ে হয় মান্ডবীর। বিয়ের পর অযোধ্যায় ফেরার পথে রামের পথ আটকে দেন পরশুরাম। তিনি শুনলেন-রাম 'হরধনু' তথা শিবের নামের ধনুক ভেঙে ফেলেছেন। পরশুরাম ছিলেন শিবভক্ত। তিনি মনে করলেন রাম হরধনু ভেঙ্গে শিবকে অপমান করেছেন। তবে রামের সাথে সুমধুর যুক্তিপূর্ণ কথায় পরশুরাম শান্ত হন।
অযোধ্যায় দশরথের বড় ছেলে রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেকের আয়োজন শুরু হয়। আত্মীয়-স্বজন, মুনি-ঋষিরা উৎসবে যোগ দেন। সবার মনে আনন্দ আর ধরে না। কিন্তু রানি কৈকেয়ীর দাসী মন্থরার মনে আনন্দ নেই। কৈকেয়ীর কাছে গিয়ে সে বলে, 'রাম রাজা হলে তোমার নিজের ছেলে ভরতের কী হবে? ভরতকে রামের দাস হয়েই থাকতে হবে। অসুস্থ রাজা দশরথকে যখন তুমি সেবাযত্ন করেছিলে, তখন রাজা তোমাকে দুটি বর দিতে চেয়েছিলেন। সেই বর চেয়ে ভরতকে রাজা করার আজই সুযোগ।' মন্থরার কুমন্ত্রণায় কৈকেয়ী রাজা দশরথের নিকট গেলেন। তিনি রাজা দশরথকে তাঁর পূর্বে তাঁকে দেয়া বরের কথা মনে করিয়ে দিলেন। এবার তিনি রাজার নিকট তাঁর প্রতিশ্রুত বর চেয়ে বলেন-
এক বরে ভরতেরে দেহ সিংহাসন।
আর বরে শ্রীরামেরে পাঠাও কানন।।
চতুর্দশ বৎসর থাকুক রাম বনে।
ততকাল ভরত বসুক সিংহাসনে।।'
এ কথা শুনে রাজা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সবকিছু শুনে রাম পিতৃসত্য পালনের জন্য বনবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সহধর্মিণী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণও তাঁর সঙ্গে যান। অযোধ্যাবাসী কাঁদতে কাঁদতে তাঁদের বিদায় জানায়। পুত্রশোকে দশরথের মৃত্যু হয়। এসময় ভরত ছিলেন তাঁর মামার বাড়িতে। তিনি প্রাসাদে এসে সবকিছু শুনে বেশ মর্মাহত হন এবং বনে গিয়ে রামের সঙ্গে দেখা করেন। অনেক কাকুতি-মিনতি করে রামকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে রামের পাদুকা নিয়ে ফিরে আসেন। সিংহাসনের ওপর পাদুকা রেখে রামের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন।
বনবাসের সময়ে রাম-লক্ষ্মণের হাতে বিরাধ রাক্ষস নিহত হয়। ঋষি অগস্ত্য রামচন্দ্রকে অনেক অস্ত্রশস্ত্র উপহার দেন। পঞ্চবটী বনে বসবাসের সময় রাবণের বোন শূর্পণখা রাম ও লক্ষ্মণকে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়। লক্ষ্মণের হাতে শূর্পণখার নাক-কান কাটা যায়। রাক্ষসেরা রাম-লক্ষ্মণকে আক্রমণ করলে রামের হাতে চৌদ্দ হাজার চৌদ্দ জন রাক্ষসসহ খর, দূষণ ও ত্রিমূর্ধা রাক্ষস নিহত হয়। বোনের অপমানের প্রতিশোধ নিতে রাবণ সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে যান। জটায়ু-পক্ষী বাধা দিলে রাবণের খক্কোর আঘাতে তাঁর পাখা কাটা যায়। রাম-লক্ষ্মণকে সীতার অপহরণের সংবাদ জানিয়ে জটায়ুর মৃত্যু হয়।
সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে রাম-লক্ষ্মণ ঋষ্যমুক পর্বতের কাছে পৌঁছান। সেখানে বানররাজ সুগ্রীবের সঙ্গে রামের অগ্নিসাক্ষী করে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। সুগ্রীব ও বালী দুই ভাই। বালী ছিলেন কিষ্কিন্ধ্যার রাজা। একদা অসুর বধ - করতে গিয়ে বালী আর ফিরে আসছিলেন না। সবাই ভাবল বালী নিশ্চিই মারা গিয়েছেন। তাই বালীর ভাই -সুগ্রীব কিষ্কিন্ধ্যার সিংহাসনে বসেন। বালী ফিরে এসে সুগ্রীবকে অত্যাচার করে তাড়িয়ে দেন। মৃত্যুভয়ে সুগ্রীব তখন ঋষ্যমুক পর্বতে বসবাস করছিলেন। ঋষির অভিশাপের ভয়ে বালী এই পর্বতে প্রবেশ করতেন না।
রামের পরামর্শে সুগ্রীব বালীকে যুদ্ধে আহ্বান করেন। রাম দূর থেকে বাণ নিক্ষেপ করে বালীকে হত্যা করেন। সুগ্রীবকে কিষ্কিন্ধ্যার রাজা ঘোষণা করা হয়। এবার সুগ্রীবের নির্দেশে বানরেরা দিকে দিকে রওনা দেয়। খবর চাই- কোথায় সীতা? হনুমান, জাম্বুবান প্রমুখরা বিন্ধ্যপর্বতে পৌঁছালে সম্পাতি-পক্ষীর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। সম্পাতি জানান- লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে আকাশপথে লঙ্কায় নিয়ে গেছে। এ কথা শুনে মহাবীর হনুমান লাফ দিয়ে সাগর পার হওয়ার উদ্দেশ্যে মহেন্দ্র পর্বতের চূড়ায় ওঠেন।
নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে হনুমান একসময় লঙ্কায় পৌঁছান। খুঁজতে খুঁজতে রাবণের অশোকবনে সীতার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এরপর হনুমান অশোকবন ধ্বংস করতে শুরু করেন। রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ এসে হনুমানকে ব্রহ্মজাল-বাণে বন্দি করে রাবণের কাছে নিয়ে আসেন। শায়েস্তা করার জন্য হনুমানের লেজে কাপড়-চোপড়, তেল-ঘি মেখে আগুন দেওয়া হয়। হনুমান তখন লাফিয়ে লাফিয়ে প্রাসাদে প্রাসাদে আগুন লাগাতে শুরু করেন। ফলে সারা লঙ্কায় আগুন ছড়িয়ে পরে। ফিরে এসে হনুমান রামের কাছে সব খবর জানান।
সাগর পাড়ি দিয়ে লঙ্কায় যাওয়ার জন্য সাগরের ওপর ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়। রাম-লক্ষ্মণসহ বানরেরা দলে দলে লঙ্কায় যায়। এদিকে রাবণের ভাই ধার্মিক বিভীষণ রামের চরণে শরণ নেন।
অতঃপর দুই পক্ষের মধ্যে মহাযুদ্ধ শুরু হলো। রাবণের ছোট ভাই কুম্ভকর্ণ টানা ছয় মাস ঘুমান এবং এক দিন মাত্র জেগে থাকেন। এরপর আবার ঘুমিয়ে পড়েন। দেশে যুদ্ধ বাঁধলে রাবণের নির্দেশে অসময়ে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে যুদ্ধে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু যুদ্ধে রামের ঐন্দ্রবাণে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু হয়। লক্ষ্মণের ঐন্দ্রবাণে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ মারা যান। রাবণের শক্তি-অস্ত্রের আঘাতে লক্ষ্মণ অজ্ঞান হয়ে যান। হনুমান বিশল্যকরণী ওষুধ আনতে হিমালয়ে আসেন। কিন্তু বৃক্ষ চিনতে না পেরে হনুমান গোটা পর্বতশৃঙ্গই তুলে নিয়ে আসেন। ওষুধির প্রয়োগে লক্ষ্মণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
রামচন্দ্র ধনুকে ব্রহ্মাস্ত্র জোড়েন। আকাশ-পাতাল কাঁপতে শুরু করে। ব্রহ্মাস্ত্রের আঘাতে লঙ্কার রাজা রাবণের মৃত্যু হয়। যুদ্ধশেষে রাবণের ভাই বিভীষণকে লঙ্কার রাজা করা হয়। এবার যাঁকে উদ্ধারের জন্য আয়োজন, সেই সীতাকে রামের কাছে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সীতাকে দেখে রামচন্দ্রের কোনো অতিরিক্ত আবেগ বা উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেল না। কারণ একদিকে তিনি যেমন স্বামী, অন্য দিকে দেশের রাজাও। রামের এ অবজ্ঞা সীতা মেনে নিলেন না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন দিবেন। কিন্তু মূর্তিমান অগ্নিদেব প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ড থেকে সীতাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। শেষে পুষ্পক রথে চড়ে সবাই অযোধ্যার পথে রওনা দেন। অযোধ্যায় রামের রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন হয়।
এদিকে অযোধ্যায় প্রজাদের মধ্যে একটি জনরব সৃষ্টি হয়। সীতা রাবণের লঙ্কায় বাস করেছেন। তাঁর চারিত্রিক শুদ্ধতা নষ্ট হয়েছে। রাজা রামচন্দ্র প্রজাদের খুশি করার জন্য সীতাকে বনবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। রামের নির্দেশে লক্ষ্মণ গর্ভবর্তী সীতাকে মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রমে রেখে আসেন। সেখানে সীতার কুশ ও লব নামে দুই পুত্রের জন্ম হয়।
এরপর বারো বছর কেটে গেছে। রাজা রামচন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করেন। ঋষি বাল্মীকি কুশ-লবকে সঙ্গে নিয়ে যজ্ঞে উপস্থিত হন। সীতাকে গ্রহণ করার জন্য তিনি রামকে অনুরোধ করেন। কিন্তু উপস্থিত প্রজারা তখনো নিরুত্তর। তখন রাম আবারও সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। সীতা অসম্ভব অপমানিত বোধ করেন। তিনি ধরণীদেবীকে অনুরোধ করলে মাটি দুইভাগ হয়ে যায়। সেখান থেকে এক নাগবাহী সিংহাসন উঠে আসে। সীতাদেবী সিংহাসনে বসে পাতালে প্রবেশ করেন।
অতঃপর মহাকালের নির্দেশে রামচন্দ্র একদিন লক্ষ্মণকে বর্জন করেন। সরঘু নদীর কূলে গিয়ে লক্ষ্মণ যোগবলে দেহত্যাগ করেন। কিছুদিন পর রামচন্দ্রও দেহত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরযু নদীর কূলে আসেন। স্বজনেরা তাঁর অনুগামী হন। রামচন্দ্র জলে নামার পর সেখানে ব্রহ্মার আগমন ঘটে। ব্রহ্মার অনুরোধে রাম বিষ্ণুর তেজে প্রবেশ করেন। অনুগামীরাও নদীর জলে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দিব্যলোক প্রাপ্ত হন।
ছক ১.১২: রামায়ণের ভালো লাগার কাহিনি
ক্রম | কান্ড | ভালো লাগার বিষয় ও কারণ |
১ |
|
|
২ |
|
|
৩ |
|
|
৪ |
|
|
৫ |
|
|
৬ |
|
|
৭ |
|
|
ছক ১.১৩: রামায়ণের আদর্শ ও তাৎপর্য
রামায়ণের আদর্শ ও তাৎপর্য | ব্যাখ্যা |
দেশপ্রেম
|
|
ভ্রাতৃত্ববোধ
|
|
|
|
|
|
|
|
ছক ১.১৪: রামায়ণে বর্ণিত সময়ে এবং বর্তমান সময়ে নারীসমাজের তুলনামূলক চিত্র
সাদৃশ্য
| ভিন্নতা
|
১.
| |
২.
| |
৩.
|
ছক ১.১৫: নারীর মর্যাদা রক্ষায় আমার করণীয়
|
|
|
|
|
প্রতি বছর ২১ জুন বিশ্বজুড়ে বিশ্ব যোগদিবস পালন করা হয়। আমাদের দেশেও বিগত কয়েক বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তোমাদের বিদ্যালয়ে বা এলাকায় অনুষ্ঠিত যোগদিবসে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নিচের বক্সে সংক্ষেপে লিখো এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করে সকলের সাথে বিনিময় করো।
ছক ১.১৬: ইয়োগা ডের স্মৃতি
|
"আত্মানং বিন্ধি" নিজেকে জানো অর্থাৎ শ্বাশত আত্মাকেই জানো। নিজের স্বরূপেই বেড়ে ওঠাই পরম আনন্দ। এই আনন্দের পরম আধার যোগ। যোগ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'যুজ' ধাতু থেকে। এই যুজ্ শব্দের অর্থ কোননো- কাজে নিজেকে নিবিড়ভাবে যুক্ত রাখা। এই যোগে যুক্ত হওয়ার কিছু ধাপ রয়েছে-
রাজযোগ: পতঞ্জলি যোগদর্শনের মাধ্যমে জীবাত্মার মাঝে পরমাত্মাকে গভীরভাবে অনুভব করা।
কর্মযোগ: নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজে যুক্ত থাকা। কাজের ফলাফলের প্রতি আসক্তি না রেখে কর্তব্যকর্ম সম্পাদন।
জ্ঞানযোগ: নাম ও রূপের বাইরে গিয়ে পরম সত্যকে উপলব্ধি করা। এখানে বিশেষ নাম বা রূপের চিন্তা করে ধ্যানের প্রয়োজন নেই। কেবল জ্ঞানের মাধ্যমেই এই যোগসাধনা সম্ভব।
ভক্তিযোগ: প্রেমপূর্ণ ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের সাকার রূপের যোগসাধনা। ভক্তি শব্দটি 'ভজ' ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ ভাগ করা বা অংশগ্রহণ করা। শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভক্তি, অনুরাগ বা প্রেমময় সাধনার সমন্বয় ভক্তিযোগ।
হঠযোগ: হঠ শব্দের অর্থ 'বলপ্রয়োগ'। অর্থাৎ বল প্রয়োগ করে শরীরকে বিভিন্ন কৌশল বা আসনের মাধ্যমে যে যোগাসন করা হয় তাই হঠযোগ।
এই যোগগুলোকে ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্য প্রয়োজন প্রাণায়াম ও ধ্যানের প্রাত্যহিক অনুশীলন।
১। প্রাণায়াম: দেহের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে নিয়ন্ত্রিত করে প্রাণশক্তিকে বৃদ্ধি করে প্রাণায়াম। এর ফলে জরা, ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর হাত থেকে আমাদের দেহ রক্ষা পায়।
২। ধ্যান: বেদ, উপনিষদ ও পতঞ্জলির যোগসূত্র অর্থাৎ রাজযোগের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্যান। এর মাধ্যমে, বাস্তবজীবন ও আত্মাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
আগের শ্রেণিগুলোতে আমরা বেশকিছু যোগাসন সম্পর্কে জেনেছি এবং প্রাত্যহিক জীবনে চর্চা করেছি। আমাদের - শরীর ও মনের জন্য যোগাসন অত্যন্ত উপকারী। এবারে আমরা আরও তিনটি যোগাসন সম্পর্কে জেনে নিই।
তাড় শব্দের অর্থ হচ্ছে পর্বত। এই আসনে দেহভঙ্গি অনেকটা পর্বতের মতো দেখায় বলে একে পর্বতাসন বা তাড়াসন বলে।
১. প্রথমে একটি ইয়োগা ম্যাটে অথবা আরামদায়ক জায়গায় দুই পায়ের পাতা পাশাপাশি রেখে দাঁড়াতে হবে। উভয় পায়ের উরু এবং হাঁটু কাছাকাছি থাকবে। নিতম্বের পেশী সংকুচিত করে ভিতরের দিকে টানতে হবে। পেটকে না ফুলিয়ে বুক টান করে এবং মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে।
২. উভয় পায়ের গোড়ালি ও বৃদ্ধাঙুল পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। পায়ের পাতা ভূমির সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকবে।
৩. যদি দাঁড়াতে বা শরীরের ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হয়, তাহলে দুই পায়ের পাতার মাঝখানে দুই-তিন ইঞ্চি ফাঁকা রাখা যেতে পারে।
৪. হাত দুটি শরীরের দুইপাশে স্বাভাবিকভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। আঙুলগুলো মাটির দিকে প্রসারিত থাকবে। হাতের আঙুল একটির সঙ্গে আরেকটি লাগিয়ে রাখতে হবে।
৫. লম্বা করে শ্বাস নিতে নিতে দুই হাত কান বরাবর মাথার উপর তুলতে হবে।
৬. হাতের বাম আঙুলগুলোর মাঝে ডান আঙুলগুলো প্রবেশ করিয়ে জোড়বদ্ধ অবস্থায় হাতের তালু ঊর্ধ্বমুখী করতে হবে।
৭. দেহের সকল ভার দুই পায়ের উপর ছড়িয়ে দিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, দেহের ভার যেন শুধু গোড়ালি বা পায়ের পাতার উপর পড়ে।
৮. এভাবে শরীরকে স্থাপন করে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড স্থির রাখতে হবে।
৯. এরপর ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। এভাবে আসনটি আরও দুই বার করতে হবে।
১. উভয় পায়ে সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়।
২. মেরুদণ্ডের বেঁকে যাওয়া রোধ করে।
৩. হাঁটুর ব্যথা উপশম হয়। উরুর মাংসপেশি শক্তিশালী হয়।
৪. শরীরে শক্তি জোগায়।
৫. শারীরিক উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপ কমায়।
৭. মনোবল, আত্মবিশ্বাস, একাগ্রতা ও উদ্যম বাড়াতে সহায়তা করে।
৮. স্নায়ু শিথিল করে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।
নিম্ন রক্তচাপ, মাইগ্রেন, অনিদ্রার সমস্যা থাকলে এ আসন না করাই ভালো।
মাটির দিকে মুখ রেখে বা মাটির সঙ্গে মুখ রেখে এই আসন করা হয়। এই আসনকে অনেকে মুখাসনও বলে।
১. হাঁটু মুড়ে ইয়োগা ম্যাট বা সমতল জায়গায় দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পাতা একত্র করে বসতে হবে।
২. দুই হাঁটুর উপর দুই হাত আলতো করে রাখতে হবে।
৩. এরপর দুই হাত সোজা করে কানের পাশ দিয়ে মাথার উপরের দিকে টেনে তুলে সোজা অবস্থানে আনতে হবে।
৪. হাত দুটোকে যতটা সম্ভব উপরের দিকে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। এই অবস্থায় কোনোক্রমেই যেন হাঁটু ভূমি ছেড়ে উপরের দিকে না ওঠে।
৫. বুকের ভিতর থেকে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে।
৬. বুক ভরে পুরো বাতাস নেওয়ার পর শরীরকে সামনের দিকে বাঁকিয়ে মাটি স্পর্শ করার চেষ্টা করতে হবে। এই অবস্থায় হাতকে ভাঁজ করা যাবে না এবং নিতম্ব পায়ের গোড়ালির উপরে থাকবে।
৭. হাত লম্বালম্বিভাবে মাটিতে স্পর্শ করার সময় কপাল মাটিকে স্পর্শ করবে।
৮. হাতের তালু দুটি মাটির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং আঙুলগুলো প্রসারিত অবস্থায় থাকবে।
৯. চিবুককে ধীরে ধীরে হাঁটুর কাছে টেনে আনতে হবে। চিবুক ও হাঁটু পরস্পর যুক্ত অবস্থানে আসবে।
১০. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় ত্রিশ সেকেন্ড স্থির থাকতে হবে।
১১. এরপর আসন ত্যাগ করে ত্রিশ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিয়ে আসনটি আরও দুইবার করতে হবে।
১. মনে ভয়, উৎকণ্ঠা, ক্রোধ উপশম করে প্রশান্তি আনতে এই আসন বিশেষ সহায়তা করে।
২. মেরুদণ্ড সবল হয়। পায়ের পেশি ও হাড়ের বাতের উপশম হয়। কাঁধের পেশির ব্যথাও দূর হয়।
৩. পরিপাকতন্ত্র সবল হয়। ফলে অজীর্ণ, অম্বল/গ্যাস্ট্রিক দূর হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধির কারণে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় জাতীয় পেটের রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
৪. বহুমূত্র ও হাঁপানি রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. পেটের চর্বি কমে। উরু সবল হয়।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই আসন খুবই বিপদজনক হতে পারে।
যোগশাস্ত্রে বিপরীত বীরভদ্রাসনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। একে বিপরীত যোদ্ধা ভঙ্গিও বলে। এটি বীরভদ্রাসনের একটি রূপ।
১. প্রথমে সমতল স্থানে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত মাথার উপরে তুলতে হবে।
২. হাত দুটো কান স্পর্শ করে থাকবে এবং হাতের তালু সামনের দিকে ফেরানো থাকবে।
৩. বাম দিকে ঘুরতে হবে। ডান পায়ের দুই থেকে আড়াই ফুট দূরে বাম পা বামে ঘুরিয়ে রাখতে হবে। ডান পা আগের ভঙ্গিতে থাকবে।
৪. বাম পায়ের হাঁটু ভেঙে শরীরকে সোজা রেখে দাঁড়াতে হবে। ডান পা পিছনে এবং সোজা থাকবে।
৫. শরীরকে পিছনের দিকে অর্ধ-চন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে বাঁকিয়ে, পিছনের ডান হাত ডান পায়ের সামনের দিকে রাখতে হবে।
৬. দশ সেকেন্ড এই অবস্থানে থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
৭. হাত ও পা বদল করে, পুনরায় আসনটি করতে হবে।
৮. এরপর আসন ত্যাগ করে ২০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। পুরো আসনটি আরও দুই বার করতে হবে।
১. মেরুদণ্ডের নরম হাড় মজবুত হয় এবং মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়।
২. পাঁজরের হাড়ের অসমতা দূর হয়।
৩. তলপেটের মেদ কমে।
ছক ১.১৭: যোগাসনের গুরুত্ব
যোগাসনের নাম | উপকারিতা |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ছক ১.১৮: ইয়োগা ফেস্টিভ্যালের স্লোগান
তারিখ |
যারা উপস্থিত ছিলো/ছিলেন:
|
যা যা হয়েছে:
|
এই ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে আমাদের অর্জন:
|
আরও দেখুন...